
প্রকাশিত: Sun, May 12, 2024 1:44 PM আপডেট: Sun, Jun 22, 2025 12:37 PM
যে স্মৃতি গৌরবের, যে স্মৃতি অশ্রুর
মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ : [১] জাতি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান স্কোয়াড্রন লিডার আসীম জাওয়াদকে হারাল। বিমানটি যখন চট্রগ্রামের উপর দিয়ে চালানো হচ্ছিল তখন অগ্নিকাণ্ড লাগে। জাওয়াদ এবং তাঁর সহযোগী নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিমানটিকে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত নিয়ে আসেন। ফলে আগুন লাগা বিমানটি নদীতে ফেলতে সক্ষম হন এই বীর। অগ্নিদগ্ধ বিমানটি জনপদে পরলে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারতো, সেটি বাঁচিয়ে শহীদের খাতায় নাম লেখালেন স্কোয়াড্রন লিডার জাওয়াদ। আই হ্যাট অফ উইথ বেস্ট অব অনার ,আই স্যালুট ইউ উইথ টিয়ার।
[২] ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেওয়ার আগেই জেনারেল ডিউটি পাইলটের নির্বাচনী পরীক্ষায় শর্ত সাপেক্ষে উত্তীর্ণ হই। শর্ত ছিল ইন্টারমিডিয়েটে ন্যূনতম দ্বিতীয় বিভাগ পেতে হবে। ফল বের হলো। রেজাল্ট তার চেয়ে অনেক ভালো হলো। এই সময় আমাদের এক নিকটাত্মীয় ,পদবিতে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট প্রশিক্ষণের সময় দুর্ঘটনায় মারা যায়। সেই মৃত্যু আমার বাবা-মা এবং মৃত অফিসারের নিকট-আত্মীয়দের মনে এতোই গভীর রেখাপাত করে যে, আমার বিমান বাহিনীতে যোগ দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং মেডিকেল কলেজের ছাত্র হিসেবে আমাকে নাম লেখাতে হয়।
[৩] সেনাবাহিনীতে চাকরির মাত্র এক বছরের মাথায় বিমান বাহিনীতে প্রেষণে এডজুটেন্ট হিসেবে এরো মেডিকেল ইনস্টিটিউটে পোস্টিং হয়। আমার ক্যাপ্টেন পদবি বদলে হয়ে যায় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট। কম্ব্যাট পোশাকের বদলে পাখির পোশাক পরা শুরু হলো। হেলিকপ্টার এবং পরিবহন বিমানের পাইলট ছাড়াও অত্যন্ত গুরুত্বর সাথে যুদ্ধ বিমানের পাইলটদেরকে বিভিন্ন সংবেদনশীল স্বাস্থ্য বিষয়ক পাঠ দান শুরু করি। এছাড়াও প্রতিবার ফ্লাই করবার আগে পাইলটদের খুব ভালো করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতাম। এই প্রক্রিয়াকে প্রি-ফ্লাইট মেডিকেল চেকআপ বলা হয়। সামান্য কোনো ব্যত্যয় হলে তাঁরা ফ্লাই করবার অনুপযুক্ত হতেন।
[৪] সর্বোচ্চ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের স্নেহ পাওয়ার ব্যপারে বিধাতা আমার প্রতি অকৃপণ ছিলেন। খোদ বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ মাত্র দুই বছর চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আমাকে স্নেহের ডোরে বন্দী করেন। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট অবস্থায় আমাকে ডেমি অফিসিয়াল লেটার প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে প্রেষণ শেষে সামরিক বাহিনীতে ফিরে এলেও স্নেহের সেই ফলগু ধারা প্রবহমান থাকে। আমার ক্যাপ্টেন এবং মেজর পদবিতে চাকরিকালীন তিনি আরও দুবার ডেমি অফিসিয়াল লেটার প্রদান করেন। এই গৌরব খুব অল্প কজন সৈনিকের ভাগ্যে জোটে।
[৫] আমার কলেজের নিকটতম বন্ধু মহসীন বিমান বাহিনীতে যোগ দেন। মেধাবী এই অফিসার সোর্ড অব অনারসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বহু পুরস্কারে ঋদ্ধ হন। আমাদের অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে স্কোয়াড্রন লিডার মহসিন যুদ্ধ বিমান চালানোর সময় দুর্ঘটনায় তেজগাঁও পি এস সি অফিসের পাশে অগ্নিদগ্ধ বিমানসহ মুখ থুবড়ে পরেন। কাঠ কয়লা পোড়ালে যেমন আকার হয় তেমন আকৃতিতে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিমান বাহিনী বেগম মহসীনকে বিশেষ সম্মানের সাথে এয়ারফোর্স অফিসার্স কোয়ার্টারে রাখেন। আমরা অপরাধী মুখ নিয়ে সপরিবারে ভাবীকে দেখতে যেতাম। উনার অশ্রুসিক্ত চোখে আমরা চোখ রাখতে পারতাম না। [৬] এয়ারফোর্স অফিসার মেসে থাকবার সময় সান্ধ্যকালীন আড্ডার নিত্যসাথী আরো দুজন পাইলটের কাঠকয়লা লাশ এই দুই পোড়া চোখ দিয়ে দেখবার বেদনা আজও আমার দুঃস্বপ্নের সাথী। [৭] স্কোয়াড্রন লিডার জাওয়াদের মৃত্যু আমার কাছে পাথরের মতো ভারী। তাঁর প্রেমময়ী স্ত্রী, স্নেহময়ী মা, আদরের সন্তানেরা এই মৃত্যুর ভার একজনমে কীভাবে বইবে? আমার অসংখ্য প্রিয়জন হারাবার বেদনার লিস্টি বড় বড় হতে আর কত বড় হবে?
লেখক: এমবিবিএস, এমফিল (বিএসএসএমইউ), ক্লাসিফাইড স্পেশালিস্ট; আর্মড ফোর্সেস
মেডিকেল কলেজ
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
